‘গরিবের গতর এরা শস্তা দেকে।’- কে কোন প্রসঙ্গে একথা বলেছে ?প্রসঙ্গত বক্তার চরিত্র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর

প্রশ্নঃ ‘গরিবের গতর এরা শস্তা দেকে।’- কে কোন প্রসঙ্গে একথা বলেছে ?প্রসঙ্গত বক্তার চরিত্র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর।

গরিবের গতর এরা শস্তা দেকে



উত্তরঃ বড় বাড়িতে কাঠ কাটতে এসে অভুক্ত ক্ষুধার্ত উচ্ছব একটু খেতে চাইলেও তার কপালে খাদ্য জোটেনা – কারণ বড় বাড়ির লোকেরা গরিবদের দিয়ে কাজ করাতেই জানে – তাদের সুখ দুঃখকে বুঝতে চায়না । বাসিনী উচ্ছবের কষ্ট বুঝলেও সে অসহায় । সেই অসহায়তা থেকেই বাসিনী উচ্ছবকে বলেছে ‘গরিবের গতর এরা শস্তা দেকে।’

বাসিনী বড় বাড়িতে কাজ করে । সে উচ্ছবের গ্রামেরই মেয়ে । লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর হাতের ছোঁয়ায় চরিত্রটি খুবই জিবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে ।বাসিনীর চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্য গুলি লক্ষ্যণীয় সেগুলি হল –

এক) শ্রেণী দরদঃ বাসিনী বড়বাড়িতে কাজ করতে এসে গাঁ ভাসিয়ে দেয়নি – নিজের শিকড়টিকে সে ভুলে যায়নি । উচ্ছবের মতো সেও যে অসহায়- সে কথা সে জানে বলেই তাকে বলতে শুনি ‘গরিবের গতর এরা শস্তা দেকে’ ।

দুই) মানবিকতাঃউচ্ছবের অভুক্ত থাকার কথা শুনেও বড়বাড়ির কেউই তাকে একটু কিছু খেতে দেয়নি । কিন্তু বাসিনী চুপ করে থাকতে পারেনি- লুকিয়ে সে উচ্ছবের জন্য ছাতু নিয়ে এসেছিলো । ‘ঝপ করে একটা ঠোঙা তার হাতে দিয়ে বলে, ছাতু খেয়ে জল খেয়ে এস রাস্তার কল হতে... এ পিশাচের বাড়ি কেমন তা ঝাননি দাদা।’ এই ঘটনার মধ্যদিয়ে ‘পিশাচের বাড়িতে’ও আমরা একটা মানবিক মুখ দেখতে পাই ।

তিন) বাস্তববোধ সম্পন্নাঃ বাঁচার জন্য বাসিনী বড়ো বাড়িতে কাজে যোগ দেয়, তাই তো তাদের মন জুগিয়েই চলতে হয় বাসিনীকে । বাসিনী এটা খুব ভালোভাবেই বোঝে জন্যই বড় পিসিমা যে লুকিয়ে চাল বিক্রি করে আর তার মাধ্যম হয় বাসিনী । এই ভাবেই তো বেঁচে থাকতে হয় বাসিনীদের ।

চার) সংস্কারীঃ উচ্ছব যখন বাসিনীর কাছে এক মুঠো চালের জন্য অনুরোধ করে ‘দে বাসিনী বাগ্যতা করি তোর’ । তখন বাসিনী মনে করিয়ে দেয় ‘আরে আরে! কর কি উচ্ছব দাদা । গাঁ সম্পক্কে দাদা তো হও।’- সম্পর্কের অবস্থানটিকে ভুলে যায়নি বাসিনী ।


সবমিলিয়ে সবদিক বজায় রাখা বাসিনী এক জীবন্ত বাস্তব চরিত্র হয়ে উঠেছে মহাশ্বেতা দেবীর হাতের ছোঁয়ায়।

0/Post a Comment/Comments