Bangla Note : গুরু নাটক - প্রশ্ন এবং উত্তর

Bangla Note : গুরু নাটক - প্রশ্ন এবং উত্তর 


Bangla Note : গুরু নাটক - প্রশ্ন এবং উত্তর



প্রশ্নঃ ‘আমি পাপ করেছি’- কে কি পাপ করেছে ? সে কি প্রকৃতই পাপ করেছে ?


উত্তরঃ গুরু নাটকের শিশু চরিত্র –যার হাত দিয়ে ৩৪৫ বছরের কুসংস্কারের আগল খুলেছেন নাট্যকার সেই সুভদ্রের কথা বলা হয়েছে এখানে ।




সুভদ্র ৩৪৫ বছরের বন্ধ থাকা আয়তনের উত্তর দিকের নিষিদ্ধ জানলা খুলেছে । যা মাতৃহত্যার সমান পাপ বলে মনে করা হয় । এখানে এই পাপের কথাই বলা হয়েছে ।




কৌতূহলী সত্যবাদী এক শিশু চরিত্র এই সুভদ্র । নামের মধ্যেই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে আছে । অচলায়তনের আর পাঁচটা বালকের থেকে এক ব্যাতিক্রমী চরিত্র সুভদ্র ।




বস্তুত সুভদ্র কোন পাপ করেনি । কারণ ৩৪৫ বছরের জানালা বন্ধ ছিল সেটি খুলে দিয়ে কুসংস্কারের বদ্ধ আয়তনে জগতের আলো হাওয়া সে নিয়ে এসেছে । এতে তার পুণ্যই হয়েছে – পুণ্য হয়েছে মানুষের ।








প্রশ্নঃ ‘দেখে ফেলেছিস? শুনে লোভ হচ্ছে যে!’ – কে কি দেখেছে ? কার কেন লোভ হচ্ছে ? এখানে বক্তার চরিত্রের কি বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে ?


উত্তরঃ ৩৪৫ বছর থেকে বন্ধ থাকা আয়তনের উত্তরদিকের বন্ধ জানালা খুলে বাইরেটা দেখে ফেলেছিল সুভদ্র । এখানে এই ঘটনাকেই বলা হচ্ছে ।




৩৪৫ বছর থেকে বন্ধ থাকা জানালা খোলার ঘটনা শোনার জন্য পঞ্চকের কৌতুহল হচ্ছে । সেটাকেই পঞ্চক শোনার লোভ সামলাতে পারছে না ।




আসলে কৌতূহলী সংস্কারক মন সম্পন্ন পঞ্চক সুভদ্রের কাছথেকে উত্তরের জানালা খোলার কথা শুনে সেই বন্ধ জানালার পেছনে সে কি কি দেখেছে তা শুনার লোভ জন্মেছে কারণ তারও জানার কৌতূহল ছিল প্রবল – যে উওরের জানালা ৩৪৫ বছর থেকে বন্ধ তার পিছনে কি রয়েছে তা জানার প্রচণ্ড কৌতূহল থেকেই পঞ্চক উক্ত কথাগুলি বলেছেন ।




এখানে পঞ্চকের কৌতূহলী অনুসন্ধিৎসু চরিত্রের বৈশিষ্ট্যই ফুটে উঠেছে ।












প্রশ্নঃ ‘প্রাণকে প্রাণ দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে যাও।’- কে কাকে বলেছেন ? কেন তাঁর এই প্রার্থনা ?




উত্তরঃ অ্যাভনের রাজহংসের মতো জোড়াসাঁকোর রবিও ছিলেন একাধারে সফল কবি ও সার্থক নাট্যকার। রবীন্দ্রনাথের নাটক প্রচলিত প্রথার অনুগামী নয়। বরং স্বকীয় জীবনচেতনার অঙ্গীরসে জারিত এই নাটকগুলি তাঁর শিল্পীসত্ত্বার আত্মপ্রকাশের অন্যতম মাধ্যম।অচলায়তন বা গুরু এমনি একটি নাটক । এই নাটকের চরিত্র আচার্য আদীনপুন্য ‘গুরু’র আগমন বার্তা শুনে তাঁর উদ্দেশ্যে উক্ত প্রার্থনা করেছেন ।




আমরা নাটকে দেখি অচলায়তনের গুরু সেখান থেকে চলে আসার পর আদিনপুন্য অযৌক্তিক শাস্ত্রবিরোধী কাজ করেছেন । কিন্তু যখন গুরুর আগমন বার্তা শুনেছেন তখন তিনি উপলব্ধি করেছেন, কেবল জীর্ণ পুন্থির ভান্ডারে প্রতিদিন তিনি তাঁর আশ্রমিক তরুণ বালকদের কোমল হৃদয়ে প্রকৃত অমৃত বানীর সন্ধান দিতে পারেননি । এই আক্ষেপ থেকেই আদিনপুন্যের উপলব্ধি ঘটেছে , যে গুরুর কাছ থেকেই জীবনদায়ী মুক্তির বানী শোনা যাবে । সেই আসাতেই আদিনপুন্য উক্ত কথা গুলি বলেছেন ।




অস্টাঙ্গশুদ্ধি উপবাসের তৃতীয় রাত্রে বালক কুশলশীল জল জল করে পিপাসায় যখন প্রাণত্যাগ করলো – তখন আদিনপুন্য নীরব ছিলেন । অথচ সুভদ্রকে যখন ‘ছয়মাস মহাতামস সাধন করতে হবে’ তখন আদিনপুন্য বলেন যে, সুভদ্রের প্রায়শ্চিত্তের প্রয়োজন নেই । কারণ আদিনপুন্য বুঝতে পেরেছিলেন প্রাণহীন অচলায়তনে প্রাণ সঞ্চারের প্রয়োজন , বুঝতে পেরেছিলেন অজ্ঞানতার অন্ধকারে আর ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না ।




প্রশ্ন- “উনি গেলে তোমাদের অচলায়তনের পাথরগুলো সুদ্ধ নাচতে আরম্ভ করবে, পুঁথিগুলোর মধ্যে বাঁশি বাজবে”- কার সম্পর্কে বলা হয়েছে? কথাটির তাৎপর্য কী?




উত্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে প্রথম যূনক তাদের দাদাঠাকুর সম্পর্কে পঞ্চককে একথা বলেছে।
অচলায়তন একটি বিদ্যায়তন। অচলায়তনিকরা জ্ঞানমার্গে ঈশ্বরের সাধনা করে। তাদের জীবনে হাজাররকমের সংস্কার। সবসময় মন্ত্র পাঠ করে, আচার পালন করে তারা নিজেদের শুদ্ধ রাখার চেষ্টা করে। নিজেদের পবিত্রতা রক্ষার জন্য তারা নিজেদেরকে ক্ষুদ্র গণ্ডীতে বদ্ধ করে রেখেছে। কঠোর অনুশাসনের মধ্যে জীবন যাপন করাকেই তারা জীবনের সার্থকতা বলে মনে করে। আর অচলায়তনের পুঁথিগুলি তাদের জীবনের পথপ্রদর্শক। সংস্কারের বেড়াজালে অচলায়তন এবং তার অধিবাসীদের জীবন অচল হয়ে পড়েছে।




এসবের বিপরীতপ্রান্তে রয়েছেন যুনকদের দাদাঠাকুর। তিনি কর্মের প্রতীক, তিনি মুক্ত প্রাণের দিশারী। সচলতাই তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র। সঙ্গীত আর নৃত্যে যে জীবনের প্রকাশ- দাদাঠাকুর সেই জীবনপথের অগ্রপথিক। তাই পঞ্চক যখন বলে দাদাঠাকুরকে অচলায়তনে নিয়ে যাবার কথা বলে তখন প্রথম যূনক বলেছিল – “উনি গেলে অচলায়তনের পাথরগুলো সুদ্ধ নাচতে আরম্ভ করবে, পুঁথিগুলোর মধ্যে বাঁশি বাজবে”। অর্থাৎ যেসকল জীর্ণ সংস্কার একটি বিদ্যায়তনকে অচলায়তনে পরিণত করেছিল, দাদাঠাকুর গেলে সেসবের অবসান হবে- অচলায়তনের মুক্তি ঘটবে।




প্রশ্ন- “যিনি সব জায়গায় আপনি ধরা দিয়ে বসে আছেন তাঁকে একটা জায়গায় ধরতে গেলে তাঁকে হারাতে হয়”- কথাটি কে কাকে বলেছেন? একথার তাৎপর্য কী?




উত্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে গুরু দর্ভকপল্লিতে নির্বাসিত অচলায়তনের আচার্য অদীনপুণ্যকে একথা বলেছেন।
উদ্ধৃত অংশে গুরু ঈশ্বরের জগতময় ব্যাপ্তির কথা বলতে চেয়েছেন। ঈশ্বরের আলাদা কোন জগত নেই- জগতের প্রতিটি জীবের মধ্যেই ঈশ্বরের প্রকাশ। ঈশ্বর উপলব্ধির জন্য কোনো কৃত্রিম পন্থা অবলম্বন করার দরকার নেই, সহজ ভক্তিতেই তাঁকে লাভ করা যায়। কিন্তু মানুষ ঈশ্বর আরাধনার জন্য মন্ত্র রচনা করেছে। জগতে সর্বত্র বিচরণকারী ঈশ্বরকে একটিমাত্র জায়গায় ধরে রাখার বাসনায় মানুষ মন্দির নির্মান করেছে। ঈশ্বর সাধনার জন্য গড়ে উঠেছে হাজাররকমের সংস্কার। সংস্কার থেকে এসেছে কুসংস্কার। আর এই সকল সংস্কার-কুসংস্কার মানুষকে ক্রমশ ঈশ্বরের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। নিজের তৈরি সংস্কারের জালে মানুষ এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছে যে একসময় ঈশ্বরের আরাধনা হয়ে উঠেছে অভ্যাসের মতো।




অচলায়তনে ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। সেখানে জ্ঞানমার্গে ঈশ্বরের সাধনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আচার্য অদীনপুণ্যের নেতৃত্বে অচলায়তনের শিক্ষা হয়ে ওঠে আচারসর্বস্ব। বাকি জগত থেকে নিজেদের আড়াল করতে গিয়ে একসময় তারা নিজেরাই ক্ষুদ্র গণ্ডীতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। তাই অচলায়তনের পাশেই দর্ভকপাড়ায় গুরু বারবার এসেছেন কিন্তু অচলায়তনে তিনি বহুদিন আসেননি।




প্রশ্ন- “অচলায়তন এবার মন্ত্র ঘুচে গান আরম্ভ হবে”- কে একথা বলেছে? কথাটির তাৎপর্য কী?




উত্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু’ নাটকে পঞ্চক তার অগ্রজ মহাপঞ্চককে একথা বলেছিল।


অচলায়তন নাটকের শুরুতেই রয়েছে গুরুর আগমন-সম্ভাবনার কথা। কে যেন এসে বলে গেছে যে “গুরু আসছেন”। গুরুর আসাকে কেন্দ্র করে নানারকমের জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে অচলায়তনিকদের মধ্যে। আচার্য মনে করেছেন যে তাদের পাপের মাত্রা পূরণ হয়েছে বলেই গুরু আসছেন আর মহাপঞ্চক প্রমুখরা মনে করেছে যে তারা সমস্ত আচার নিষ্ঠাভরে পালন করেছে বলেই গুরু আসছেন। কিন্তু পঞ্চকের মনে হয়েছে যে গুরু আসছেন অচলায়তনের আচারসর্বস্ব জীবন থেকে মুক্তি দেবার জন্য।




বস্তুতপক্ষে, অচলায়তনের আবাসিকদের মধ্যে পঞ্চক একটি ব্যাতিক্রমি চরিত্র। পড়াশুনায় তার মন নেই, মন্ত্রগুলো সে বারবার ভুলে যায়। তার মন দ্বিধাগ্রস্ত- পুঁথিপাঠেই জীবনের সার্থকতা নাকি পুঁথিগুলো ছুঁড়ে ফেলে জীবনের স্বাদ পাওয়া সম্ভব? পঞ্চক মনেপ্রাণে চায় যে গুরু এসে তাকে রাস্তা দেখিয়ে যান। কিন্তু গুরুর আসার কথা শুনেই পঞ্চকের “মন্তরে কেবল ভুল হচ্ছে” আর সে আপন মনে গান গেয়ে উঠছে। তাই সে ধরে নিয়েছে যে গুরু এলে অচলায়তনে পুঁথির প্রয়োজন থাকবে না, জীবনের জয়গান ধ্বনিত হবে- অচলায়তনের বোবা পাথরগুলোতে প্রাণের প্রতিষ্ঠা হবে।

0/Post a Comment/Comments