প্রশ্নঃ ‘শনি ও মঙ্গলের – মঙ্গলই হবে বোধয় – যোগাযোগ হলে তেলেনাপোতা আপনারাও একদিন আবিষ্কার করতে পারেন ’- প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপোতা গল্প অবলম্বনে তেলেনাপোতার মতো একটি গ্রামকে কেন লেখক আবিষ্কারের বিষয় বস্তু হিসাবে গ্রহন করেছেন বুঝিয়ে দাও ।
অথবা
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের কাহিনী অবলম্বনে এই গল্পের নামকরণের অন্তর্নিহিত ব্যাঞ্জনা পরিস্ফুট কর ।
উত্তরঃ
‘জানি এ যে ধ্বংস পুরি ।
বিস্মৃতি বটঝুড়ি নামায় চেতনা লোক ঢেকে, অতল সুক্তি বিবর খোঁজে
অনড় স্থবির সব অজগর মূল ।
ভাঙা দেওয়াল, দরজা হাঁ হাঁ,
জানালাগুলো যেন দানব
কোনো করোটির উপড়ানো সব চোখ,
ধ্বসে পড়া ছাদের গায়ে ।’
এরকম নির্জ্জনতা ধ্বংস মুখ বিশাল বাড়ি, সেখানে মানুষের অবস্থান- সব মিলে গ্রামের এই বাড়িটার প্রেতাইত রূপ মানুষের মনের মধ্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় । এই পরিবেশ তেলেনাপোতার পরিবেশ ।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে পাই একটি গ্রামের চিত্র, যেখানে একটি ভেঙ্গে পড়া বিশাল অট্টালিকা যাকে প্রেতপুরীর মতো মনে হয়, মাছধরার জন্য বড় পুকুর, মহানগরী থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরে ব্যাঘ্র সঙ্কুল স্থান – এসব ভাবনা ভাবতে ভাবতে গ্রামের মধ্যে এক বিশাল মাঠ পার হয়ে যাবে গরুর গারি – যা ছাড়া অন্যকোন যান নেই সেখানে । সারা সপ্তাহে কর্মক্লান্ত শরীরে একটু শান্তি একটু তৃপ্তি আনার জন্য এই সংক্ষিপ্ত ভবন । বাড়ির পরিবেশ এমন যা সাড়া শরীরে রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে ।
প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ বড় বড় থাম , দেউড়ির খিলান, মন্দিরের ভগ্নাংশ । রাতে বাইরে ঝি ঝি ডাক , মশার গুঞ্জন – এক রহস্যময় পরিবেশ রচনা করেছে ।তারপর রাত্রি অতিক্রম করে সকালের আলোর জগতে বাঁশের ডগায় মাছরাঙ্গা – মোটা লম্বা সাপ ঘাটের ফাটল থেকে বেড়িয়ে অচঞ্চল গতিতে সাঁতার দিয়ে পুকুর পার হয়ে যায়, মাছ ধরার ফাৎনায় দুটো ফড়িঙ এর পাখা নেড়ে বসার চেষ্টা এবং উদাস ঘুঘুর ডাক – যে কারও মনকে আনমনা করে তোলার পক্ষে যথেষ্ট । যামিনীর উপস্থিতি মনকে আবিশ্বাস্য রোমান্টিকতায় ভরিয়ে দেবে । আর বিকেলবেলায় ফিরবার সময় ওই প্রেতপুরীর বৃদ্ধার অনুরোধ নতুন করে মনের আকাশে কুয়াশার সৃষ্টি করে মানসিক যন্ত্রণার পরিবেশ তৈরি করবে ।
আসলে তেলেনাপোতা নামে কোন জায়গা নেই । এটা কল্পনার রঙে ও তুলিতে আঁকা একটি পরিবেশ যা রোমান্টিক নিশ্চয়ই এবং মিষ্টিসিজমের মোড়কেও ভরা । তেলেনাপোতা আবিষ্কার করার মধ্যে কলম্বাসের আবিস্কারের মতো আনন্দ আছে, কারণ এমন একটি পরিবেশ মাছ ধরার পরিকল্পনা করা হয়েছিল যেখানে কোন এক আশ্চর্য সরোবরে পৃথিবীর সবচেয়ে সরলতম মাছেরা এখন তাদের জল জীবনের প্রথম বর্শিতে হৃদয়বিদ্ধ করবার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে – কারণ সেখানে যামিনীর মতো সরলমনা মেয়ের হৃদয় ছড়িয়ে আছে – যা সহজে বিদ্ধ হতে পারে । কিন্তু সহজে বিদ্ধ হতে চায়নি বলেই ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ এত গুরুত্বপূর্ন হয়ে দাড়িয়েছিল ।
Post a Comment