প্রশ্নঃ মঙ্গলকাব্য বলতে কী বোঝ ? এর এরূপ নামকরণ কেন হয়েছে ? মঙ্গলকাব্যের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ পঞ্চদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত লৌকিক দেব-দেবীর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে যে এক শ্রেণীর আখ্যান কাব্য বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে বিশেষভাবে রচিত হয়েছে, তাদেরই সাধারণ নাম মঙ্গলকাব্য ।
নামকরনঃ মঙ্গলকাব্যের মঙ্গল নাম হওয়ার পিছনে যে কারণগুলি রয়েছে বলে মনে হয় সেগুলি হল –
১) এগুলি মঙ্গলকারক দেব-দেবীর মাহাত্ম্য বর্ণন কাব্য তাই মঙ্গলকাব্য ।
২) মঙ্গলাসুর বধ একদা যে কাব্যের উপজীব্য ছিল সেই কাব্যই মঙ্গলকাব্য ।
৩) এক মঙ্গলবারে শুরু অন্য মঙ্গলবারে সমাপ্তি এ কারনেও মঙ্গলকাব্য নাম হতে পারে ।
ডঃ চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে – ‘যে গানে মঙ্গলকারী দেবতার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয় এবং যে গান মঙ্গলসুরে যাত্রা ও মেলায় গাওয়া হত, তাকেই মঙ্গলকাব্য বলা হয়ে থাকে।’
ঐতিহাসিক গুরুত্বঃ
১) মঙ্গলকাব্যের অধিকাংশ দেবদেবী যেহেতু লৌকিক আর্যেতর সংস্কৃতির বাহন সেহেতু মঙ্গলকাব্য পাঠ করলে আমরা লৌকিক জীবনাচরণ সম্পর্কে জানতে পারি ।
২) মঙ্গলকাব্যের মধ্যে তৎকালীন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের চিহ্ন ধরা আছে ।
৩) একদা এই সমস্ত আর্যেতর দেবদেবী নিম্নসমাজে পূজিত হলেও খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতক থেকে সমন্বয়ের যুগ শুরু হলে তাঁরা উচ্চবর্নেরও শ্রদ্ধা লাভ করলেন ।
৪) তৎকালীন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবার জন্য সাধারণ বাঙ্গালী এই শক্তিশালী দেবদেবীর পূজা করতে লাগলেন । মঙ্গলকাব্য আমাদের এই তথ্য জানায় ।
Post a Comment