Bangla Notes : চন্ডিমঙ্গল । সর্ব শ্রেষ্ঠ কবি । কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী

প্রশ্নঃ চন্ডিমঙ্গল কাব্যের সর্ব শ্রেষ্ঠ কবি কে ? তার কাব্য প্রতিভার পরিচয় দাও ।




উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর নাম এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। মধ্যযুগের কবি হলেও তার কাব্যঝংকার আধুনিক যুগকে স্পর্শ করেছে। ফলে শুধু মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে নয়, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান জুড়ে রয়েছে কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রর্বীর নাম ।


অভয়ামঙ্গলের কবি মুকুন্দঃ কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কাব্য সাধারণতঃ ‘অভয়ামঙ্গল’ নামে পরিচিত। কাব্যের গোড়ার দিকে কবি যে আত্মপরিচয় তুলে ধরেছেন তাতে তার জীবন ও তৎকালীন রাষ্ট্রীয় সংকটের নির্মম ও নির্জলা বাস্তবচিত্র, বস্তুনিষ্ঠ, চমৎকারিত্ব ও অত্যন্ত নিষ্ঠাপূর্ণভাবে বর্ণিত হয়েছে- যা বাংলার তৎকালীন সামাজিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।


কবিপ্রতিভাঃ


ক) দেব-দেবীর মাহাত্ম্যজ্ঞাপক মধ্যযুগীয় মঙ্গলকাব্যের ধারায় কাব্য রচনা করলেও তার কাব্যে যেন মাটির পৃথিবীর রক্তে-মাংসে গড়া মানুষের জীবন জীবিকা,আচার-নিষ্ঠা,সুখ-দুঃখের বাস্তব চিত্র জীবন্ত হয়ে ফুটে ঊঠেছে। যা মধ্যযুগের আর কোন কবির কাব্যে প্রাণচাঞ্চল্যে ততটা জীবন্ত হয়ে উঠতে পারেনি।


খ) মধ্যযুগের কবি হওয়া সত্ত্বেও মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কাব্য প্রাণরসে এতটাই জীবন্ত ও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে যে, তা পাঠ করে মনে হয় তিনি যেন আধুনিক যুগেরই মানবতাবাদী কবি।


গ) তার রচনারীতি, বাচনভঙ্গি, চরিত্র চিত্রন, গভীর জীবনবোধ, বাস্তবনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি, কাহিনীর গাঁথুনি ইত্যাদি মিলিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করলে অনন্যসাধারণ কবি প্রতিভার অধিকারী হিসেবে কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কপালে বিশেষত্বের টীকা না পরিয়ে থাকার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয়না।


ঘ) বাস্তবভিত্তিক সমাজচেতনায় সমৃদ্ধ কবিকঙ্কণ মঙ্গলকাব্যে দেব-দেবীর মাহাত্ম্য প্রচারের ক্ষেত্রে মাটির পৃথিবীর মানুষের চরিত্র দেব-দেবীর চরিত্রে মিলিয়ে দিয়ে চরিত্র চিত্রণের ক্ষেত্রে যে মানব রসের সৃষ্টি করেছেন মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে আর কোন কবির কাব্যে তা দেখা যায়না।


ঙ)সাহিত্যে মানব রস, মানুষের প্রেম বিচ্ছেদ, আনন্দ, বিরহ-বেদনা, হাসি-কান্নার সুরের অনুরণন মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যে একমাত্র মুকুন্দরামের লেখাতেই দৃষ্টিগোচর হয়।–
‘সবার উপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই।’


তাই মুকুন্দরাম তার চন্ডীমঙ্গল কাব্যে দেবী মাহাত্ম্যকীর্তন করতে গিয়েও করেছেন মানব মাহাত্ম্যকীর্তন।


চ) তবে এ সবকিছু ছাপিয়ে কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী যে বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তা হলো তার চরিত্রাঙ্কণ বা চরিত্র চিত্রণ।তার রচিত কাব্যে বেণে মুরারি শীল ও ভাড়ূঁদত্ত, তার দাসী দুর্বলা চরিত্রগুলো চিত্রণে মুকুন্দরামের জুড়ি মেলা ভার। শুধু মধ্য যুগেই নয় সমগ্র বাংলা সাহিত্যে এমন সুপরিচিত চরিত্র ও এমন জীবন্ত চিত্র আর দেখা যায়না।


বাংলা সাহিত্যে মানবতাবাদ, মানবরস, মানবপ্রেম যখন একেবারেই অনুপস্থিত, আধুনিক কাল যখন অনাগত, মানুষ হিসেবে মানুষের মর্যাদা যখন ছিল অনাবিস্কৃত, তখন এক স্ফুটনোম্মুখ মানবতার প্রথম কবি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে একেবারে আধুনিক কালকেই স্পর্শ দিয়ে যান মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ।

0/Post a Comment/Comments