গবেষণা, তাত্ত্বিক গবেষণা ও ফলিত গবেষণা - Research, Theoretical Research, Applied Research
ইংরাজীতে গবেষণার প্রতিশব্দ হল Research, অর্থাৎ Re অর্থপূনঃ Search, অর্থঅনুসন্ধান । যার বাংলায় মূল অর্থ পুনরায় অনুসন্ধান করা বা পুনরনুসন্ধান । গবেষণা বিষযেResearch' শব্দটি বাংলায় অধিক প্রচলিত একটি বাচন। এর সমর্থক শব্দ হল জিজ্ঞাসা প্রদত্ত অনুসন্ধান, বিকিরন এবং নিরুপন । পুনরনুসন্ধান অথবা গবেষণা যাই-ই ব্যবহার করা হােক না কেন যার মূল উদ্দেশ্য সত্যের অনুসন্ধান । অর্থাৎ গবেষণাহল সত্য অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া,যার সাধারন অর্থ হল ‘সত্য' (Truth) ও ‘জ্ঞান'(Knowledge)-এর অনুসন্ধান । অন্যভাবে বলা যায়, গবেষণা হল তুলনামুলক উন্নত পর্যবেক্ষন করা, ভিন্ন প্রেক্ষিতে খোজা এবং বাড়তি জ্ঞানের সংযােজন করার সুশৃংখল ব্যবস্থা। কোনাে নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহের জন্য যথা সম্ভব অভিজ্ঞতাবাদী অথবা বৈজ্ঞানিক ও সুসংবদ্ধ অনুসন্ধান হল গবষণা । সার্বিক ভাবেবলা যায় গবষণা হল কোনাে নির্দিষ্ট বিষয়ের ব্যপক উন্মুক্তকরন এবংকঠোর সুসংবদ্ধ অনুসন্ধান।
উদ্দেশ্যগত ভাবে যে কোনাে গবেষণাই নতুন জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে উপস্থিত জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে আগ্রহী করে তােলে। এর পিছনে কাজ করে গবেষকের অনুসন্ধিৎসু মন এবংসমস্যা সমাধানের পথ নির্দেশ উদ্ভাবনের প্রত্যশা । কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে গবেষণালব্ধফলকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়।
গবেষণারপ্রকৃতি হল :
১) গবেষণা হয় ধারাবাহিক ও সুশৃংখল ।
২) গবেষককে হতে হয় সাহসী ও নিরপেক্ষ । গবেষণার তথ্যাদি সমাজের প্রচলিত নিয়মের বাইরে যায় তা হলেও তা প্রকাশে সাহস থাকা দরকার।
৩) গবেষককে সকল ধরনের আবেগ বর্জিতের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করতে হয়।
৪) গবেষণা একটি সময়সাপেক্ষ, ব্যায়বহুল ও শ্রম-স্বপেক্ষ বিষয়।
৫)অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নির্দেশকের দ্বারা গবেষককে চালিত হতে হয়। অন্যথায় মূলউদ্দেশ্য ব্যহত হয়।
৬) গবেষণার উপর গবেষণা করে নতুন নতুনতত্ত্ব ও তথ্য আবিষ্কার হয়।
গবেষকের মূখ্য উদ্দেশ্য হল অনুসন্ধানের মাধ্যমে মানবিক আচরন এবং সমাজ জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি করে সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। আপাত দৃষ্টিতে মানুষের সামাজিক জীবন জটিল এবং ভিন্নধর্মী হলেও অন্তনিহিত সামঞ্জস্য এবং শৃঙ্খলার ধারনাই সামাজিক গবেষণার সােপান । (Seltz, c jahoda, M. Deutch, M and Cook, -25-30)
প্রেরনাগতদিক থেকে (From motivitional Aspect) সামাজিক গবেষণা (Social Science Research) মূলত: দুইপ্রকার-
১) তাত্ত্বিকগবেষণা ( Pure Research) এবং
২) প্রয়ােগমূলকগবেষণা (Applied Research)।
১) তাত্ত্বিকগবেষণা বামৌলিক গবেষণা: (Pure Research) :
যে গবেষণার দ্বারা কোন তত্ত্বের ও পূর্বানুমানের উন্নয়ন ও পরীক্ষা করা হয় অনুসন্ধানকারীর জ্ঞানের স্থান পূরণের উদ্দেশ্যে এবং যার কিনা ভবিষ্যতে সামাজিক প্রায়ােগিক দিক থাকবে, কিন্তু বর্তমানের সমস্যা সমাধানের কোন প্রায়গিক দিক নেই তাই মৌলিক গবেষণা। এক কথায় বললে যে গবেষণার দ্বারা জ্ঞানের সংগ্রহ হয় জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে তাই মৌলিক গবেষণা। (Kothari 2004:3জ্ঞানের জন্য জ্ঞানান্বেষণ হল শুদ্ধ বা তাত্বিক গবেষণা (gathering knowledege for knowledge's sake)। এক্ষেত্রে বৌদ্ধিক এবং যুক্তি সঙ্গত প্রক্রিয়ার (intellectual and rational process) সমাজ বা মানবিক আচরন সম্পর্কে মৌলধারনা, নীতি এবং তত্ত্ব নির্দেশ করা হয়ে থাকে। এটি কি করা কর্তব্য তা নিয়ে ভাবে না, যা অবস্থান করে তা নিয়েই সংশ্লিষ্ট থাকে । বস্তুত মৌলিক গবেষণা নিম্নে বর্ণিত দুটি কাজ সম্পন্ন করে।
১. নতুন তত্ব আবিষ্কার
২. বিদ্যমান তত্বের উন্নয়ন
২) প্রয়ােগমূলকগবেষণা বা ফলিত গবেষণা(Applied Research): ফলিত গবেষণা হচ্ছে সেই গবেষণা যার দ্বারা সামাজিক সমস্যা সমাধান সম্ভব, যে সমস্যাগুলাে সমসাময়িক উদ্বিগ্নের বিষয়। অর্থাৎ ফলিত গবেষণার লক্ষ্যই হচ্ছে সেই সকল সমস্যা সমাধান পাওযা যা কিনা কোন সমাজ বা প্রতিষ্ঠানে ঘটছে। (Kothari 2004:3) তাত্ত্বিক গবেষণা ও ফলিত গবেষনা পরস্পর সম্পর্কিত, কারণ তাত্বিক গবেষণা ফলিত গবেষণার পথপ্রদর্শক। মানব সমাজের অবস্থার উন্নয়নের জন্য সহায়ক জ্ঞান। অর্জনকে প্রয়ােগ মূলক গবেষণা বলে (Gathering knowledege that could aid in the betterment of human destiny is termed as applied or practical research) । এই গবেষণা মানব সমাজের আশু সমস্যাবলীর সমাধানের পথ নির্দেশ করে থাকে। কি হওয়া উচিত তার উপর গুরুত্ব আরােপ করে। এই গবেষণা মূল্যমান সাপেক্ষ এবং উপযােগিতা নির্ভর।
Post a Comment