শিক্ষক শিক্ষায় গবেষণা - Research in Teacher Education

শিক্ষক শিক্ষায় গবেষণা - Research in Teacher Education


Research in Teacher Education



প্রতিটি মানুষের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা আছে। কিন্তু কিভাবে বােঝা যাবে যে, কার চিন্তা-ভাবনা সঠিক? যেমন আমরা যদি একটি শ্রেণীর দুইজন শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করি, তাহলে দেখা যাবে যে, এই একই শ্রেণীর দুইজন শিক্ষার্থীর জন্য প্রেষণা প্রদানের পদ্ধতি একরকম নাও হতে পারে। একজনকে হয়তাে বকা দিলে তার ফলাফল ভালাে হয় বা ক্লাসে মনােনিবেশ করে, অন্যজনকে হয়তাে প্রতিনিয়ত প্রশংসা করে উৎসাহ প্রদান করতে হয় ও সাহস যােগাতে হয়। এই পরিস্থিতিতে কিভাবে বােঝা যাবে কার জন্য কি ধরনের প্রেষণা পদ্ধতি প্রয়ােজন? শিক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণা এই ধরনের পরিস্থিতিতে সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম। বর্তমানে প্রতিযােগিতার যুগে যে কোন পেশার পেশাভিত্তিক উন্নয়নের জন্য ক্রমাগতভাবে পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। গবেষণার মাধ্যমে যে কোন সমস্যার বৈজ্ঞানিকভাবে সমাধান করা সম্ভব। জ্ঞানের যেকোন শাখায় গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা এবং সকল কর্মকাণ্ডের উন্নতি, অগ্রগতি, সকল-দুর্বল দিক চিহ্নিত করা সম্ভব। শিক্ষকতা একটি অন্যতম প্রাচীন পেশা হলেও এই পেশায়ও বর্তমানে এর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশ্বের সকল দেশই কম-বেশি শিক্ষা সংক্রান্ত মৌলিক (Basic) বা প্রয়ােগমূলক (Applied) গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে।

শিক্ষা গবেষক John W. Best এর মতে, “বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়ােগ দ্বারা বিশেষণের আরও আনুষ্ঠানিক, সুসংবদ্ধ ও ব্যাপক প্রক্রিয়াকে গবেষণা হিসেবে অভিহিত করা যায়।" জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি, প্রসার, উন্নতি অথবা পরিবেশের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করা, নিজস্ব উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করা কিংবা নিজের সংঘাতের সমাধানের পথ খুঁজে বের করার জন্য গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

সময়ের সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাবিদ ও মনােবিজ্ঞানীগণ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। এভাবেই সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনাে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া ও নতুন জ্ঞানের সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা গবেষণা বিশ্বস্তরূপে আবির্ভূত হয়েছে এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণা করার উদ্দেশ্য হলাে শিখন-শেখানাে কার্যক্রমের জন্য নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি ও এর মাধ্যমে শিক্ষা অনুশীলনের মানােন্নয়ন করা। শিক্ষা গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে: শিক্ষার্থীর শিখন (Learning): কোন পদ্ধতি বা কৌশলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় ভালােভাবে আয়ত্ত করতে পারে সে ব্যাপারে দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।



শিক্ষকের শিক্ষণ পদ্ধতি নির্বাচন (Teaching Methods): শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জনের পথ সুগম করার জন্য কোন শিক্ষণ পদ্ধতি সবচেয়ে ফলপ্রসূ হবে তার বিশদ ধারণা লাভ করা যায়।

প্রেষণা(Motivation): কিভাবে শিক্ষার্থীদের নতুন জ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করা যায় ও প্রেষণা দেয়া সম্ভব যা শিক্ষার্থীকে একজন পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।

শিক্ষার্থীর বিকাশ(Development): শিক্ষার্থীর পরিণমন ও তার জ্ঞানগত, সামাজিক ও আবেগিক দক্ষতার বিকাশ কিভাবে শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জনের সাথে সম্পর্কিত এবং শিক্ষার্থীর বিকাশে ভূমিকা পালন করে তা জানা যায়।

শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনা(Classroom Management): কি কি কৌশল প্রয়ােগের মাধ্যমে ফলপ্রসূ শ্রেণী ব্যবস্থাপনা সম্ভব সে ব্যাপারে জ্ঞানলাভ করা যায়। এক কথায় বলা যায়, শিক্ষা গবেষণা হলাে শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত সুপরিকল্পিত উপায়ে সংগৃহিত তথ্য ও এর যথাযথ বিশ্লেষণ। শিক্ষা গবেষণায় শিক্ষাক্ষেত্রের বিভিন্ন বিষয় (aspect) অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। যেমন: শিক্ষার্থীর শিখন, শিক্ষণ-পদ্ধতি, শিক্ষক-প্রশিক্ষণ ও শ্রেণীকক্ষের উন্নয়ন।

এবার আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণার প্রয়ােজনীয়তা নিয়ে কিছু কথা বলব। একটি রাষ্ট্র যখন তার জনগণের জন্য প্রয়ােজনীয় শিক্ষা-ব্যবস্থার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায়শ বিভিন্ন সমকালীন অসম্পূর্ণতা ও অসামঞ্জস্যতা চিহ্নিত করার প্রয়ােজন দেখা দেয়। শিক্ষার বিভিন্ন স্তর অনুযায়ী দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদগণ কর্তৃক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয় তাতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে অসম্পূর্ণতা ও অসংগতি ধরা পড়ে। পাইলট টেস্টিং এর জন্য যখন পরীক্ষামূলকভাবে শিক্ষাক্রম বিস্তরণ করা হয় তখন শ্রেণিকক্ষে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকগণ শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম পরিচালনা করার সময় তারাও মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তক, প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্রের ধারা, মানবন্টন ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে শিক্ষা বৎসরসমূহের ক্লাশসমূহের ক্লাশগুলােতে যেন এ সমস্ত অসুবিধা মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হয় তার জন্য শিক্ষককেও শ্রেণিকক্ষ শিক্ষণ নির্ভর গবেষণা করতে হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণার প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম। শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণা হলাে কার্যকরী শিক্ষণ-শিখনের জন্য নতুন জ্ঞান সৃষ্টির হাতিয়ার। বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে সম্যক ধারণালাভ ও তার সমাধানের উপায়। গবেষণার মাধ্যমে মিথ্যাকে মিথ্যা ও সত্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। শিক্ষা অনুশীলনের উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। নতুন জ্ঞানের সাথে পুরাতন জ্ঞানের অসামঞ্জস্যতা নির্ণয়, জ্ঞানের সম্প্রসারণ ও বৃদ্ধি করার মাধ্যম হলাে শিক্ষা গবেষণা।


শিক্ষাক্রম, শিক্ষণ-শিখন সামগ্রী প্রণয়ন ও ব্যবহার, পাঠ্যপুস্তক এর বিভিন্ন দিক, শিক্ষার্থীর শিখন, শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি, শিক্ষা মূল্যায়ন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অংশসমূহের অসঙ্গতি, দুর্বলতা ইত্যাদি দিক অবলম্বনে শিক্ষা গবেষণা কাজ পরিচালনা করার প্রয়ােজনীয়তা আজকের বিশ্বায়নের যুগে দ্রুত উন্নয়নশীল বিশ্বে অনস্বীকার্য।

0/Post a Comment/Comments